সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, স্বাধীন বাংলাদেশে ’৭৫ পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন আজ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব দম্পতির প্রথম সন্তান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। শেখ মুজিবুর রহমানের ৫ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি টুঙ্গিপাড়ায় বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৭ সালে গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। কলেজ জীবন শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্কুল জীবনেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৬২-তে স্কুলের ছাত্রী হয়েও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে তার নেতৃত্বে মিছিল গিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অধ্যায়নকালে ১৯৬৬-১৯৬৭ শিক্ষাবর্ষে কলেজ ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু তার রাজনৈতিক জীবনের পথ চলা। ’৬৯-এর গণআন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বঙ্গবন্ধুকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, ওই সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরের ৬ বছর লন্ডন ও দিল্লিতে তাদের নির্বাসিত জীবন কাটে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে এ দেশে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। পুরো রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাঁকে লক্ষ করে পুলিশের গুলিবর্ষণ।১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার হামলা করা হয়। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে তাঁর কামরা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়। ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দু’টি বোমা পুতে রাখা হয়। শেখ হাসিনাকে হত্যা করার লক্ষ্যে সবচেয়ে বর্বরোচিত হামলাটি হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ওই দিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও গুলি চালানো হয়। দলের নেতাকর্মীরা সেদিন মানবঢাল তৈরি করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করলেও মারা যান ১৯ জন।
শেখ হাসিনার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলো ছিল: ভারতের সঙ্গে সাথে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন। এছাড়া, তিনি কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।
দলের সভাপতির জন্মদিন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত সংখ্যক নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বাদ জোহর এবং দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সকাল ৯টায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার (মেরুল বাড্ডা), সকাল ১০টায় খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস চার্চ (২৯, সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০), সকাল ৬টায় তেজগাঁও জকমালা রাণীর গির্জা এবং সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে সব সহযোগী সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে পালন করবে।