রক্তস্নাত বিভীষিকাময় ভয়াবহ ২১শে আগস্ট। রাজনৈতিক ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি কলঙ্কময় দিন। মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের নারকীয় গ্রেনেড হামলার ১৬তম বার্ষিকী। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট দিনটি ছিল শনিবার,ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে জড়ো হয়েছিলেন আওয়ামীলীগের নেতা,কর্মি ও সিনিয়র নেতারা। দলটির প্রধান এবং তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ছিলেন ওই সমাবেশের প্রধান অতিথি। আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে রাস্তায় একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। বিকাল ৩টা থেকে দলটির কিছু মধ্যম সারির নেতারা এবং বিকাল ৪টায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেয়ার শুরু করেন। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তখনও এসে পৌঁছাননি। দলের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা শেখ হাসিনার বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় ছিলেন।
২০০৪ সালের সারাদেশে একযোগে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামীলীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে বিকেল পাঁচটায় পৌঁছায়, একটি ট্রাকের ওপর তৈরিকৃত মঞ্চে প্রায় ২০ মিনিটের বক্তৃতা শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসতে থাকেন। ঠিক এমন সময় শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেড। এতে ঘটনাস্থলেই ১২ জন এবং পরে হাসপাতালে নেওয়া আরও ১২ জন নিহত হন,ঘাতকরা শেখ হাসিনাকে লক্ষ করে গ্রেনেড ছুঁড়ে এবং গুলি করে কিন্তু তার দেহরক্ষী ল্যান্স করপােরাল (অবঃ) মাহবুবের কারনে তিনি বেঁচে যান। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সহ প্রায় ৩০০ লোক আহত হয়। এই হামলায় নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী মিসেস আইভি রহমান অন্যতম, যিনি বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী।
গ্রেনেড হামলায় নিহতরা হলেন শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স করপােরাল (অবঃ) মাহবুব,রফিকুল ইসলাম ওরফে আদা চাচা,মুক্তিযোদ্ধা মােহাম্মদ হানিফ,রতন শিকদার, হাসিনা মমতাজ রিনা,রিজিয়া বেগম,সুফিয়া বেগম,লিটন মুন্সি,আবদুল কুদুস পাটোয়ারী,আবুল কালাম আজাদ,আব্বাস উদ্দিন শিকদার,আতিক সরকার,মামুন মূধা,নাসিরদ্দিন সরদার,আবুল কাশেম,বেলাল হোসেন,আব্দুর রহিম,আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম,জাহেদ আলী,মােতালেব হোসেন,মােশতাক আহমেদ সেন্টু,মােমেন আলী,এম শামসুদ্দিন,ইসহাক মিয়া।
এ ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়া, চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি হান্নান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৫২ জনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে অন্য মামলায় মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড হওয়ায়, তিনজন ছাড়াই বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠন যথাযথ মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করেছেন।